সুস্থভাবে রোজা রাখার জন্য সেহরি ও ইফতারে খাদ্যভাস কেমন হওয়া উচিত?

সেহরি ও ইফতারের খাদ্যভাস কেমন হওয়া উচিত

সুস্থভাবে রোজা রাখার জন্য সেহরি ও ইফতারে খাদ্যভাস
সুস্থভাবে রোজা রাখার জন্য সেহরি ও ইফতারে খাদ্যভাস


সুস্থভাবে রোজা রাখার জন্য সেহরি ও ইফতারে খাদ্যভাস

  

  

সুস্থভাবে রোজা রাখার জন্য সেহরি ও ইফতারে খাদ্যভাস গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।রোজার মাস সাধারণত অন্য যে 11টি মাস আছে সেই মাসগুলো অপেক্ষায় একেবারে ভিন্ন। রোজার মাসকে সাধারণত আমরা উৎসব আমেজে পরিনত করে ফেলি। আর সেই উৎসবটা আমাদের দেখা যায় খাবার টেবিলে। আমরা যদি সার্বিকভাবে সুস্থ থাকতে চাই রোজার মাসে কোন শারীরিক জটিলতা মুক্ত সিয়াম সাধনা করতে চাই সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদেরকে কিছু নির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করতে হবে।


যেটি মেনে চললে আপনি রোযার মাসে খুব সুন্দর করে সাবলীলভাবে শারীরিক জটিলতা মুক্ত সিয়াম সাধনা করতে পারবেন।


আমরা যদি সর্বপ্রথমে ধরে নেই যে রোজার মাসে আমাদের রোজা খোলার ক্ষেত্রে ইফতার  থেকে যদি শুরু করি আমরা,সে ক্ষেত্রে প্রথমে আমাদের খাদ্যাভাসের যে বিষয়টি মাথায় রাখবো সেটি একটি বা দুটি খেজুর  মুখে দিয়ে ইফতার খোলার চেষ্টা করব। তারপরে আমরা এক গ্লাস নরমাল পানি পান করে নিতে পারি।


একবারে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকায় আমরা কিন্তু কখনো অতিরিক্ত পানি একবারই পান করবো না। কারণ এতে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা হতে পারে।


আরো পড়ুন



আমরা সাধারণত বলে থাকি ইফতার  থেকে সেহরি পর্যন্ত যে খাবার গুলো আমরা খেয়ে থাকি সেই খাবারগুলো কে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে নিতে হবে। কারণ অন্য মাসগুলোতে পুষ্টিবিদেরা বলে থাকে "আপনার খাদ্যাভাসে পাঁচ থেকে ছয় ভাগে আপনার খাবারের খাদ্যতালিকা কে বিভক্ত করে নিতে হবে।"


সে ক্ষেত্রে রমজান মাসে এর ব্যতিক্রম একেবারেই ঘটানো যাবে না। আপনি ইফতার কেও দুই থেকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে খাবেন। এক্ষেত্রে আপনি খেজুর আর পানি মুখে দিয়ে ইফতার খুলতে পারেন। তারপর এক গ্লাস লেবু পানি অথবা বিভিন্ন মৌসুমী ফলের জুস পান করে সালাত(নামাজ) আদায় করতে পারেন।


সালাত আদায় করার পর আপনার প্রধান যে সকল খাবার খাদ্য তালিকায় আছে সেগুলো খেতে পারেন।


এক্ষেত্রে আমরা সাধারণত ইফতারি  যেটা করে থাকি অতিরিক্ত বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া আইটেম যেগুলোতে প্রচুর পরিমানের তেল মসলা ব্যবহার করা হয় সে জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকা রেখে থাকি।


আমাদের এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যে, যেহেতু রমজান মাস এবং পাশাপাশি গ্রীষ্মকাল এই সময় যদিৎ আমরা খুব সহজেই  তৃষ্ণার্ত হওয়া ছাড়া এবং কোনো শারীরিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত থেকে রোজা করতে চাই এক কথায় সুস্থভাবে রোজা রাখার জন্য  ভাজাপোড়া এবং  অতিরিক্ত তেল মসলা জাতীয় খাবার 

কিছুটা এড়িয়ে চলতে হবে এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায় খেতে হবে।


যেমন, আপনার খাদ্য তালিকায় খুব সহজেই হজম হয়ে যায় এই জাতীয় খাবারের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের স্যুপ রাখতে পারেন।যেমন: মাশরুমে স্যুপ, চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ, ইত্যাদি।


অথবা আপনি দই চিরা মিশিয়েও খেতে পারেন। আপনি চাইলে বিভিন্ন ফলের সাথে 

চিড়া  বার্লি এগুলো মিশিয়ে স্মুদি আকারেও খেতে পারেন। এগুলো রমজান মাসে খাদ্যাভাস একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।


খাদ্যতালিকায় আমাদের সাধারণত রমজান মাসে ট্রেডিশনাল খাবার হচ্ছে ছোলা,বড়া। এই জাতীয় খাবার যদি আপনি খাদ্যতালিকায় রাখতে চান সেক্ষেত্রে আপনার জন্য সব থেকে বেশি ভালো হবে যে, আপনি যদি ছোলা টাকে  না ভুনা করে বা মসলা দিয়ে রান্না না করে শুধুমাত্র সিদ্ধ করে নিয়ে তার সাথে সামান্য শসা গাজর টমেটো পেঁয়াজ মরিচ কুচি কুচি করে কেটে একসাথে সালাত মত মাখিয়ে খাওয়ার চেষ্টা  করে তাহলে সেটা খুব বেশি কার্যকর হবে আপনার জন্য।


আর সোলার সাথে সাধারণত আমরা বড়া পিয়াজু আলুর চপ ডিম চপ  বিভিন্ন ধরনের আইটেম করে থাকি। এগুলো প্রতিটি খাবার একবারে গ্রহণ না করে আপনি যেকোনো দুটি অর্থাৎ একটি চপ অথবা একটি পিয়াজু রাখতে চান সেক্ষেত্রে রাখতে পারেন।


কিন্তু যদি অতিরিক্ত এই জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় রাখেন সে ক্ষেত্রে এটি আপনার জন্য গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির তৈরি করবে। তাছাড়া আপনারা খাদ্যতালিকায় কিন্তু হালিম সংযুক্ত করতে পারেন। ইফতারে আপনি বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার আছে সেগুলো পরিবর্তে যদি খুব কম মসলা দিয়ে রান্না করা হালিম হয় তাহলে সেটা কিন্তু খুব স্বাস্থ্যসম্মত হবে।

এক্ষেত্রে আমরা বিফ হালিম এর পরিবর্তে চিকেন হালিম খাদ্যতালিকা রাখবো।



 যারা সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ আছেন তাদেরকেও যে অতিরিক্ত দামি খাবার গুলো খাদ্যতালিকায়  রাখতে হবে এমনটা না। আপনি চাইলে খুব সহজেই খেজুর পানি মুছে দিয়ে ইফতার খুলতে পারেন। খাদ্যতালিকায় নরম করে রান্না করা ভাত সবজি মাছ মাংস ডিম ডাল এগুলো রাখতে পারেন।


ইফতারের পরে আমরা কিন্তু সাধারণত অতিরিক্ত ইফতার গ্রহণের করার পরে একবারে সেহরিতে চলে যাই। যেটা খুব বেশি অস্বাস্থ্যকর।


আপনাকে অবশ্যই দৈনিক ক্যালরি চাহিদা পূরণ করার জন্য অল্প অল্প করে বারেবারে খাবার গ্রহণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে রাতের খাবার অবশ্যই গ্রহণীয়। রাতের খাবার হিসেবে আমরা এমন খাবার গুলো রাখব  যেন সেখানে পুষ্টি ৬টি  উপাদানেরই থাকে। অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ফ্যাট ভিটামিন মিনারেল পানি এ জাতীয় খাবার অবশ্যই অন্তর্গত থাকে।


কিন্তু কম পরিমাণে হলেও খাবার গ্রহণ করতে। এসময় চাইলে আপনি এক গ্লাস দুধ রাখতে পারেন। কিছু বাদাম রাখতে পারেন ডিম রাখতে পারেন। বিভিন্ন সবজির স্যুপ চিকেন সুপ রাখতে পারেন অথবা আপনি সবজির চিকেন মিক্স করেও সু্্যপ খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। সাথে লাল চা, লাল আটার ভাত সবজি ডাল মাছ মাংস এগুলো খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। পছন্দটা নির্ভর করবে আপনার উপরে আর আপনার দেহের ক্যালরি চাহিদা কত এটার উপর নির্ভর করে আপনাকে খাদ্য তালিকা সাজাতে হবে।


পরবর্তীতে যে সময়টি সেটি হচ্ছে সেহেরী।

সেহেরীর সময় সাধারণত আমরা যে ভুলটি করি আযান দেওয়ার খুব কাছাকাছি সময় ঘুম থেকে উঠি। অর্থাৎ আমরা ঘুম থেকে উঠলে গলাধঃকরণ করে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করে ফেলি যেটা একেবারেই  অস্বাস্থ্যকর। এর ফলে আমাদের এসিডিটির সমস্যা হতে পারে বুক জ্বলতে পারে বদহজমের মতো সমস্যাও হতে পারে।


তাই আপনাকে অবশ্যই থেকে এক ঘন্টা আগে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে সামান্য পানি পান করে তারপরে কিছু সময় বিরতি দিয়ে আপনার প্রধান খাবারগুলো খাওয়া উচিত।


অবশ্যই পড়বেন




সেহেরি খাদ্যতালিকা তেও এমন খাবার রাখা উচিত যেগুলো ধীরে ধীরে  হজম হয়। অর্থাৎ পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত থাকি। 


লাল চা লাল আটা এছাড়াও লাল চিড়া অথবা আপনি দুধের তৈরি খাবার গুলো খাদ্য তালিকার রাখতে পারেন।

এক্ষেত্রে পুষ্টিবিদেরা সাধারণত বলে থাকেন রমজান মাসে সেহেরী কে যদি একটি আদর্শ প্লেট হিসেবে রাখেন এক্ষেত্রে আপনার জন্য সেটি খুব ভালো কার্যকর হবে। একটি প্লেট নিয়ে সেটিকে সমান চারটি ভাগে ভাগ করে নিবেন। তার মধ্যে দুই ভাগ থাকবে শাকসবজি ফলমূল, আরেক ভাগে থাকবে শর্করা জাতীয় খাবার। যেমন লাল চা লাল  আটার রুটি ওটস লালচিরা ইত্যাদি। আর বাকি একভাগে থাকবে প্রোটিন জাতীয় খাবার। প্রোটিন বলতে ফাস্ট ক্লাস প্রোটিন হতে হবে মাছ মাংস দুধ এই জাতীয় খাবার।


অনেকেই সাধারণত যদি শুধু ভাত খেয়ে থাকেন সেহরির আগে আপনি এক গ্লাস দুধ পান করতে ভুলবেন না। যদি আপনার কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকে তাহলে অবশ্যই দুধ পান করার চেষ্টা।


আর পর্যাপ্ত পানি ইফতার থেকে সেহরি সময় ভাগ করে নিতে হবে। আট থেকে 10 গ্লাস পানি ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত গ্রহণ করবেন।  ইফতার বা সেহরিতে অতিরিক্ত পানি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।


রমজান মাসে অনেকেই এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। সুস্থ থাকার জন্য সাধারনত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে হয় এগুলো কখন করব? উত্তর হচ্ছে আপনি যখন ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত সময়ে খাবার গ্রহণ করবেন শেষ মনে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করার চেষ্টা করবেন।


সব থেকে ভাল হয় ইফতার শেষ করার পর  অথবা রাতের খাবার গ্রহণ করার পরে 30 থেকে 40 মিনিট ফ্রি হ্যান্ড যেসকল শরীরচর্চা গুলো আছে সেগুলো করার চেষ্টা করতে পারেন। এগুলো সুস্থভাবে রোজা রাখার  জন্য বেশ কার্যকর হবে।


সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত আমরা যে সময়টা  খাবার গ্রহণ করি না অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা থেকে যদি বিরত থাকেন সেটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো হবে।


আশা করি এই নিয়মে সেহরি ও ইফতারের খাদ্যাভ্যাস তৈরি করেন এবং এই  ছোটখাট টিপস গুলো যদি আপনি মেনে চলেন তাহলে রমজান মাসে  খুব সুন্দর এবং সুস্থ ভাবে রোজা রাখতে পারবেন।ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন